শুক্রবার ১৫ আগস্ট ২০২৫ - ১৯:৩৮
প্রকৃত শিরক হলো আমেরিকা-ইসরায়েলকে ভয় করা এবং তাদের দাবি মেনে নেওয়া

ইসলামের ইতিহাসে কারবালার ঘটনা শুধুই এক যুদ্ধ বা দুঃখজনক স্মৃতি নয়; এটি ইসলামী উম্মাহর ত্যাগ, একতা ও প্রতিরোধের প্রতীক। প্রকৃত শিরক হলো শক্তিশালী ও আগ্রাসী শক্তি—যেমন আমেরিকা ও ইসরায়েলকে—ভয় পাওয়া এবং তাদের দাবি মেনে নেওয়া। কারবালার স্মরণই সেই ভয় ও শিরককে চ্যালেঞ্জ করার ঈমানী শক্তি প্রদান করে।

হাওজা নিউজ এজেন্সি: ইসলামের ইতিহাসে কারবালার স্মরণ দুইভাবে উদযাপিত হয়েছে। একদিকে ছিল সক্রিয় স্মরণ, যেখানে কারবালার ঘটনা কেবল তাত্ত্বিক, দার্শনিক বা প্রতীকী স্তরে সীমিত ছিল। এটি মূলত তাদের জন্য যারা ইসলামের জন্য ত্যাগ করতে ইচ্ছুক। অন্যদিকে, কারবালাকে বার্ষিক মিছিল ও সমবেত স্মৃতির মাধ্যমে পালন করা হতো, যা জনগণকে ঐক্যবদ্ধ করে এবং ইসলামী প্রতিরোধ ও প্রতিবাদের চেতনাকে জাগ্রত করত।

সক্রিয় স্মরণের ধারাবাহিকতা ইরানের ইসলামী বিপ্লবকে উৎসাহিত করেছে এবং প্রতিবাদ ও প্রতিরোধের অনুভূতি জাগিয়েছে। এই স্মৃতি ও চেতনা আইআরজিসি, বাসিজ, আমল, হিজবুল্লাহ, আনসারুল্লাহ, হাশদ আল-শাবি, হারাকাত আল-নুজাবা, আসা’য়িব আহলুল হক, কাতাইব হিজবুল্লাহ প্রভৃতি আন্দোলন ও সংস্থা গঠনে নেতৃত্ব প্রদান করেছে।

কারবালার স্মরণ শুধু রাজনৈতিক বা সামরিক লক্ষ্য পূরণের জন্য নয়; এটি মানুষের মনকে শক্তিশালী করে, ইসলামী নৈতিকতা ও আত্মত্যাগের শিক্ষা দেয়। ইসলামের দ্বিতীয় কারবালা—নেতৃত্বাধীন আন্দোলনের প্রয়োজনের সময়—এই শক্তিগুলো গাজায় ভাইদের রক্ষা করতে এবং আধুনিক ইয়াজিদের সাম্রাজ্য—ইসরায়েলের মুখোমুখি দাঁড়াতে সক্রিয় ভূমিকা নিয়েছে।

অন্যদিকে, যারা কারবালাকে কেবল ইতিহাসের এক নির্মম ঘটনা হিসেবে বইয়ের পাতায় সীমাবদ্ধ রেখেছে এবং শুধুমাত্র দোয়া বা আলোচনার পর্যায়ে আবদ্ধ রয়েছে, তারা হতাশ হয়ে পড়েছে। তাদের নৈতিক ও আত্মিক শক্তি হ্রাস পেয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে, যেখানে ইহুদিবাদী ও সাম্রাজ্যবাদী শক্তি আরব জমি দখলের খোলা আহ্বান জানাচ্ছে, সেখানে অনেক আরব দেশের সরকার ও জনগণের ইসরায়েলের বিরুদ্ধে প্রতিরোধের ঘোষণা তো দূরের কথা, ক্ষোভ প্রকাশের সাহসও নেই।

সমাধান কী? কারবালার চেতনায় ফিরে যাওয়া। যা প্রথমে শিরক মনে হতে পারে, তা প্রকৃতপক্ষে মানুষকে নৈতিক ও আত্মিকভাবে রক্ষা করে। অন্যদিকে, শক্তি বা স্বাধীনতার স্বাভাবিকীকরণই প্রকৃত বিদ‘আহ; শোক নয়। তাই বলা যায়, কারবালা শিরক নয়—ইসরায়েলই প্রকৃত শিরক।

ধর্মীয় ও রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে কারবালার প্রাসঙ্গিকতা

শিয়াদের জন্য: কারবালার স্মরণ ও চেতনা রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের মধ্যে সীমাবদ্ধ হওয়া উচিত নয়। বরং এটি ব্যক্তিগত ত্যাগ, নৈতিক শিক্ষা এবং আত্মশুদ্ধির মাধ্যমে ইসলামের চেতনা জাগরণের জন্য অপরিহার্য।

সুন্নিদের জন্য: বিশেষ করে ফিলিস্তিনের নেতৃবৃন্দ (যেমন: ইসমাইল হানিয়া, নিঝার বানাত, আবু হামজা, ইয়াহয়া সিনওয়ার) কারবালা রাজনৈতিক ও স্মরণী আন্দোলন হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ। এটি তাদের প্রতিরোধ ও সংগ্রামের অনুপ্রেরণা জোগায় এবং শক্তিশালী নৈতিক ভিত্তি গড়ে তোলে।

কারবালার শিক্ষা আজও প্রাসঙ্গিক—এটি মুসলমানদের ভয়কে পরাস্ত করতে, শিরককে চিহ্নিত করতে এবং ইসলামী উম্মাহকে ঐক্যবদ্ধ করতে সহায়তা করে। প্রকৃত শিরক হলো সাম্রাজ্যবাদী শক্তির ভয়, যে ভয় মানুষকে নৈতিক ও আত্মিক শক্তি থেকে বঞ্চিত করে। তাই কারবালার চেতনায় ফিরে যাওয়া বর্তমান সময়েও মুসলমানদের জন্য একান্ত অপরিহার্য।

আপনার কমেন্ট

You are replying to: .
captcha